খাদ্যের ছয়টি উপাদানের মধ্যে স্নেহ পদার্থ বা ফ্যাটই সবচেয়ে বেশি শক্তি উৎপন্ন করে। প্রায় সব প্রাকৃতিক খাদ্যবস্তুর মধ্যে এদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। স্নেহ জাতীয় পদার্থ পানিতে অদ্রবণীয় এবং পানির চেয়ে হালকা।
স্নেহ পদার্থ বা ফ্যাটের শ্রেণিবিভাগ
(ক) বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ফ্যাটের শ্রেণিবিভাগ- ফ্যাট বা স্নেহ পদার্থকে বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
(১) কঠিন স্নেহ এবং (২) তরল স্নেহ।
(১) কঠিন স্নেহ- যেসব স্নেহ পদার্থ স্বাভাবিক তাপে ও চাপে কঠিন আকৃতির হয় সেগুলোকে কঠিন স্নেহ বলে। যেমন-প্রাণীর চর্বি, মাখন ইত্যাদি।
(২) তরল স্নেহ- যেসব স্নেহ পদার্থ স্বাভাবিক তাপে ও চাপে তরল অবস্থায় থাকে সেগুলোকে তরল স্নেহ বলে। যেমন-সয়াবিন তেল, সরিষার তেল ইত্যাদি।
খ) উৎস অনুযায়ী স্নেহ পদার্থের শ্রেণিবিভাগ- উৎস অনুযায়ী স্নেহ পদার্থকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়- (১) উদ্ভিজ্জ স্নেহ ও (২) প্রাণিজ স্নেহ।
(১) উদ্ভিজ্জ স্নেহ- যেসব স্নেহ পদার্থ উদ্ভিদ জগৎ থেকে পাওয়া যায় তাদেরকে উদ্ভিজ্জ স্নেহ বলে। যেমন- নারিকেল তেল, সরিষার তেল ইত্যাদি।
(২) প্রাণিজ স্নেহ যেসব স্নেহ পদার্থ প্রাণিজগৎ থেকে পাওয়া যায় তাদেরকে প্রাণিজ স্নেহ বলে। যেমন-গরুর চর্বি, ঘি, মাখন, মাছের তেল ইত্যাদি।
খাদ্য উৎস
(১) প্রথম শ্রেণির উৎস- এখানে স্নেহের পরিমাণ ৯০% থেকে ১০০%। সয়াবিন তেল, ঘি, মাখন, সরিষার তেল, কড মাছের তেল বা হাঙর মাছের তেল ইত্যাদি।
(২) দ্বিতীয় শ্রেণির উৎস- এখানে স্নেহের পরিমাণ ৪০% থেকে ৫০%। বিভিন্ন ধরনের বাদাম যেমন-চীনাবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম, আখরোট, নারিকেল ইত্যাদি।
(৩) তৃতীয় শ্রেণির উৎস- এখানে স্নেহের পরিমাণ ১৫% থেকে ২০%। দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, যকৃৎ ইত্যাদি।
আমাদের খাদ্যে দৈনিক ক্যালরির ২০% থেকে ২৫% স্নেহ পদার্থ থেকে গ্রহণ করা উচিত। ফ্যাট বা স্নেহ-জাতীয় খাদ্য প্রয়োজনের চাইতে বেশি খেলে তা শরীরের কোনো কাজে লাগেনা এবং দেহে ফ্যাট আকারে জমা থাকে। যার ফলে দেহের ওজন খুব তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পায়। তাই ফ্যাটজাতীয় খাদ্য বেশি খাওয়া উচিত নয়।
বিভিন্ন প্রকার ফ্যাটজাতীয় খাদ্য
স্নেহ পদার্থ বা ফ্যাটের কাজ-
১। স্নেহ পদার্থের প্রধান কাজ হলো তাপ ও শক্তি সরবরাহ করা। ১ গ্রাম স্নেহ পদার্থ থেকে দেহে ৯ কিলোক্যালরি শক্তি উৎপন্ন হয়।
২। দেহে শক্তির উৎস হিসাবে সঞ্চিত থাকে।
৩। কোষ প্রাচীরের সাধারণ উপাদান হিসেবে স্নেহ পদার্থ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৪। ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে-কে দ্রবীভূত করে দেহে গ্রহণ উপযোগী করে তোলে।
৫। দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোকে সংরক্ষণের জন্য স্নেহ পদার্থের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
৬। দেহ হতে তাপের অপচয় রোধ করে শরীর গরম রাখে।
৭। স্নেহ পদার্থ চর্মরোগের হাত থেকে রক্ষা করে।
৮। খাদ্যের স্বাদ বৃদ্ধি করে।
ফ্যাটের অভাবে দেহে-
কাজ ১- তুমি প্রতিদিন যে ফ্যাটজাতীয় খাদ্য গ্রহণ করো সেই খাবারগুলোর তালিকা করো। কাজ ২- ফ্যাটজাতীয় খাদ্য তোমার শরীরে কী ধরনের কাজ করে তা লেখো। |
Read more